নেদারল্যান্ডসের হেগের আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) মঙ্গলবার গণহত্যার শুনানিকে কেন্দ্র করে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি না পেয়ে টেকনাফ ও উখিয়ার রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে দোয়া মাহফিল।
এর আগে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে আবেদন করেছিল আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) নামে রোহিঙ্গা সংগঠন।
তবে ওই প্রতিষ্ঠানটিকে বড় ধরনের সমাবেশ করার অনুমতি দেয়নি সংশ্লিষ্টরা। তাই ক্যাম্পগুলোতে ছোট পরিসরে মসজিদ ও মাদরাসায় দোয়া মাহফিল চলছে।
অন্যদিকে রোহিঙ্গাদের অভিযোগ মিথ্যা দাবি করে অং সান সু চির সমর্থনে মিয়ানমারে বিভিন্ন স্থানে মিছিল-সমাবেশ করেছে বৌদ্ধরা। এমনটি জানিয়েছেন একাধিক আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যম। এসব তথ্য নিশ্চিত করেছে বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়, জেলা পুলিশ ও রোহিঙ্গাদের অধিকার নিয়ে কাজ করা সংগঠন এআরএসপিএইচ এর নেতারা জানান। রোহিঙ্গা নেতারা জানায়, সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত মিয়ানমারে রোহিঙ্গাদের গণহত্যার সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবি করে টেকনাফের শালবন, নয়াপাড়া, জাদিমুরা, লেদা, উখিয়ার কতুপালং, লম্বাশিয়া, সীমান্তের শূন্য রেখাসহ বেশ কিছু ক্যাম্পের মসজিদ, স্কুল ও মাদরাসায় বিশেষ দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। এতে শত শত রোহিঙ্গা ও শিশুরা অংশ নেয়।
নাম না বলার শর্তে আরাকান রোহিঙ্গা সোসাইটি ফর পিস অ্যান্ড হিউম্যান রাইটসের (এআরএসপিএইচ) এক নেতা বলেন, আন্তর্জাতিক আদালতে (আইসিজে) রোহিঙ্গা গণহত্যার বিচার শুরু হতে যাচ্ছে। এই বিচার যথাযথ প্রক্রিয়ায় রোহিঙ্গাদের পক্ষে রায় পাওয়ার জন্য এখানে আমরা শান্তিপূর্ণভাবে কর্মসূচি পালন করতে চেয়েছিলাম। কিন্তু কর্মসূচি পালনে কর্তৃপক্ষের অনুমতি না পেয়ে মোনাজাত ও দোয়া মাহফিল করছি। রোহিঙ্গাদের বিচার পেতে আল্লাহ যেন সহায় হন। এ দিকে মিয়ানমারের রোহিঙ্গা মুসলিমরা গণহত্যার বিচার সঠিকভাবে পায় তার জন্য বিচারচলাকালীন প্রতিদিন বিশেষ দোয়া মাহফিল পরিচালনার জন্য আহ্বান জানিয়েছেন রোহিঙ্গাদের বিদ্রোহী সংগঠন আরাকান রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (এআরএস) আরসার প্রধান নেতা আতাউল্লাহ আবু আম্মা জুনুনি। তিনি ৮ ডিসেম্বর এক অডিও বার্তায় এ আহ্বান জানান।
এছাড়া বার্মিজ রোহিঙ্গা অর্গানাইজেশন অব ইউকে চেয়ারম্যান মি. টুং কি এক ভিডিও বার্তায় অনুরূপ আহ্বান জানান দেশ-বিদেশে অবস্থান নেওয়া রোহিঙ্গাদের প্রতি। তিনি বলেন, রোহিঙ্গাদের এটি একটি বড় অর্জন যে, গণহত্যার মতো জঘন্য অপরাধের বিচারে মিয়ানমার স্টেট কাউন্সিলর অং সান সুচিকে কাঠগড়ায় বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে।
বাংলাদেশ শরণার্থী, ত্রাণ ও প্রত্যাবাসন কার্যালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছে। তবে বিষয়টি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দেখছেন। কক্সবাজারের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (প্রশাসন) মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন বলেন, রোহিঙ্গারা ক্যাম্পে মিছিল-সমাবেশের অনুমতি চেয়েছিল কিন্তু দেওয়া হয়নি। এ বিচার নিয়ে যাতে ক্যাম্পে কোনও ধরনের অপ্রীতিকর অবস্থা সৃষ্টি না হয়, সেজন্য সংশ্লিষ্টরা সর্তক রয়েছে।
প্রসঙ্গত, গত ১১ নভেম্বর ইসলামি সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) সমর্থনে গাম্বিয়া মিয়ানমারের বিরুদ্ধে রোহিঙ্গা গণহত্যার অভিযোগে মামলাটি করে। গাম্বিয়াও গণহত্যা সনদে স্বাক্ষরকারী দেশ। এ দিকে মিয়ানমার সেনাবাহিনীর নির্মম নির্যাতনের মুখে ২০১৭ সালের ২৫ আগস্টের পর রাখাইন ছেড়ে বাংলাদেশে আসেন প্রায় সাড়ে সাত লাখ রোহিঙ্গা। এর আগে থেকে এ দেশে অবস্থান করছিলেন আরও চার লাখ রোহিঙ্গা। বর্তমানে ৩৪টি শিবিরে বর্তমানে ১১ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বসবাস করছে।
গণহত্যার শুনানিকে কেন্দ্র করে রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোতে চলছে দোয়া মাহফিল
শর্টলিংকঃ